লামা প্রতিনিধি :::
বিগত মৌসুমের ন্যায় চলতি মৌসুমেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় বৃষ বৃক্ষ তামাক চাষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রায় ৯ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পুঁজিবাদী তামাক কোম্পানীগুলো। তামাক কোম্পানীগুলো তাদের রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত প্রায় সাড়ে আড়াই হাজার চাষিকে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছে। আর কৃষকরা তাদের ফসলি জমি, স্কুলের মাঠ, মাতামুহুরী নদীর চর, নদীর দুই ধার ও বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে তৈরি করেছে বীজতলা।
কৃষি অফিসের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে কোম্পানীগুলো লামা উপজেলায় ৬০০ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৪’শ ৮২ একর জমিতে তামাক চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষি অফিসের পরিসংখ্যানটি সঠিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কোম্পানীগুলোও রেজিস্ট্রেশনকৃত চাষীর সংখ্যা ও জমি পরিমাণ কতো তা কৌশলগত কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন, বেসরকারী সংস্থা কারিতাস ও ইক্ষু গবেষণার উদ্বুদ্ধকারনের কারণে প্রায় ৫শ চাষী এ চাষ থেকে ফিরে তারা এখন তুলা, আখ, পেঁপেসহ বিভিন্ন চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, লামা বনবিভাগের বমু সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়ি আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাক বীজতলা করা হয়েছে। বীজতলায় উৎপাদিত চারা এখন জমিতে রোপনের কাজ শুরু করেছে কোন কোন চাষি। আবার অনেকে তামাকের জন্য জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বিকল্প চাষ পেলে চাষীরা এ চাষ ছাড়বেন বলে জানান কৃষকরা।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে এসব চাষিদের আগে ভাগেই অর্থ, সার, বীজ, পলিথিন, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত এসব চাষী মৌসুম শুরুর আগেই চড়া মূল্যে ফসলি জমিগুলো অগ্রিম লাগিয়ত নেয়। ফলে সবজি চাষিরা জমি নিয়ে বিপাকে পড়েন। লামা পৌরসভা এলাকার হরিণঝিরি গ্রামের সবজি চাষি হায়দার আলী, শাহ জাহান মিয়াসহ আরো অনেকে জানান, তামাক চাষিদের অগ্রিম লাগিয়তের কারণে সবজি চাষের জন্য জমি পাওয়া যায়না। আর পাওয়া গেলেও মূল্য বেশি হওয়ায় অনেক সময় জমি লাগিয়ত নেয়া সম্ভব হয়না।
এছাড়াও তামাক কোম্পানীগুলোর রেজিষ্ট্রেশন বহির্ভূত তামাক চাষীর সংখ্যাও প্রায় দুই শতাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরাও প্রায় ৫০০ একর জমিতে এবার তামাক চাষ করবে। সবমিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার একর জমিতে তামাক চাষের প্রস্তুতি চলছে বলে স্থানীয় তামাক চাষীরা জানিয়েছে। তবে বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে আবুল খায়ের ট্যোবাকো কমপক্ষে সাড়ে চার’শ চাষীর মধ্যে ১,৮৯০ একর, নাসির ট্যোবাকো প্রায় ২০০ জন চাষীর মধ্যে ৭০০ একর, ঢাকা ট্যোবাকো প্রায় ৯০০ হাজার চাষীর মধ্যে আড়াই হাজার একর, বিএটিবি প্রায় ৭’শ চাষীর মধ্যে কমপক্ষে ২০০০ একর এবং নিউজএইজ টোব্যাকো কোম্পানীর ৫০০ জন চাষীর মধ্যে ১০০০ একর জমিতে তামাক চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
তামাক চাষ বন্ধে ২০১০ সালে বান্দরবানের সাংবাদিক আলাউদ্দিন শাহরিয়ারসহ ৩ জন বাদী হয়ে বান্দরবান চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ঐ বছর পুরো জেলায় মাত্র ১ হাজার একর জমিতে তামাক চাষের অনুমতি দেয় এবং পরবর্তী বছর থেকে তামাক চাষের প্রতি সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাগুলী দেখিয়ে চামাক চাষ অব্যাহত রেখেছে তামাক কোম্পানীগুলো।
সাংবাদিক আলাউদ্দিন শাহরিয়ার জানান, বার বার একই জমিতে তামাক চাষের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। রবিশস্যের উৎপাদনে নেপথ্যচারী হিসেবে নানা অন্তরায় তৈরি হচ্ছে। তাই জনস্বার্থে তামাক চাষ বন্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু কোম্পানীগুলো আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনও তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছে। তবে এ বিষয়ে টোব্যাকো কোম্পানীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, সরকারীভাবে তামাক চাষ বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। তবে তামাক চাষে চাষীদের কোন ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছেনা, বরং কৃষকদেরকে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিকল্প আখ, পেঁপে, ভুট্টা, তুলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ এবং চাষ দেয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: